‘আসন’ কথাটির সঙ্গে আমরা পরিচিত। আমরা জানি যোগব্যায়ামের একটি বিশেষ পদ্ধতিকে আসন বলে ৷
নিয়মিত আসন অনুশীলন করলে শরীরের প্রতিটি স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্ত্র, টিস্যু, পেশি সতেজ হয় এবং কর্মক্ষম থাকে। এতে শরীর সুস্থ থাকে। মন প্রশান্ত থাকে ।
আসন অনুশীলন করলে -
• দেহ নমনীয় হয়, সবল হয় এবং মাংসপেশি পুষ্ট হয়।
• দেহ ও মনের সমতা রক্ষিত হয়।
• অবাঞ্ছনীয় চিন্তাকে দূরে রাখা যায়।
• সাধনার জন্য মন প্ৰস্তুত হয় ৷
আমরা পদ্মাসন, শবাসন, বজ্রাসন ও পদহস্তাসন অনুশীলনের পদ্ধতি ও উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছি। এখন সর্বাঙ্গাসন ও গোমুখাসন সম্পর্কে জানব।
যে আসন অভ্যাস করলে দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থ, সবল ও নীরোগ হয় তাকে সর্বাঙ্গাসন বলে।
চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ি। পা-দুটি সোজা করে ধীরে ধীরে উপরে তুলি। তারপর কনুই শরীরের সঙ্গে প্রায় সমান্তরাল রেখে হাতের চেটো দিয়ে পিঠ ঠেলে ধরি। এ অবস্থায় থুতনি যেন বুকের উপর কণ্ঠকূপে লেগে থাকে। এভাবে দম নিতে নিতে ও ছাড়তে ছাড়তে কুড়ি/ত্রিশ সেকেন্ড থাকতে হবে। পরে দম ছাড়তে ছাড়তে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। এভাবে এ আসন চারবার অভ্যাস করতে হয়। প্রতিবার অভ্যাসের পর ত্রিশ সেকেন্ড শবাসন করতে হয়।
দলগত কাজ : সর্বাঙ্গাসনটি শ্রেণিকক্ষে দলগতভাবে করে দেখাও।
যোগশাস্ত্র অনুসারে এ আসনের অনুশীলন করলে সকল প্রকার ব্যাধির বিনাশ ঘটে। সর্বাঙ্গাসন করলে থাইরয়েড ও স্নায়ুমণ্ডলী সতেজ হয়। দেহ অত্যন্ত সক্রিয়, সবল ও কর্মঠ হয়। এ আসন দেহের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমায়। কোষ্ঠ-কাঠিন্য দূর করে। হাঁপানি রোগ প্রতিরোধ করে।
এ আসন অনুশীলনের সময় অনুশীলনকারীর পায়ের অবস্থান গরুর মুখের মতো হয়। তাই এ আসনের নাম গোমুখাসন ৷
পা দুটিকে সামনে ছড়িয়ে দিয়ে বসতে হবে। বাম পা হাঁটুর কাছে ভাঁজ করে ওই পায়ের গোড়ালি ডান দিকের নিতম্বের পাশে স্পর্শ করাতে হবে। ঠিক একইভাবে বাম পায়ের উপর দিয়ে এনে ডান পায়ের গোড়ালি বাম দিকের নিতম্বে স্পর্শ করাতে হবে।
বাম হাঁটুর উপর ডান পায়ের হাঁটু একই অবস্থায় থাকবে। এবার ডান হাত সোজা মাথার উপরে তুলে এনে ডান কনুই থেকে ভাঁজ করে পিঠের দিকে রাখতে হবে। এবার বাম হাত কনুই থেকে ভাঁজ করে পিঠের উপর দিকে আনতে হবে। তারপর বাম হাতের আঙুলগুলো দিয়ে ডান হাতের আঙুলগুলো ধরার চেষ্টা করতে হবে। মেরুদন্ড সোজা থাকবে। এভাবে প্রতি পায়ে দুবার করে চারবার অভ্যাস করতে হবে। প্রতিবার অভ্যাসের পর কুড়ি সেকেন্ড শবাসন করতে হবে।
দলগত কাজ : শ্রেণিকক্ষে দলে ভাগ হয়ে একদল সর্বাঙ্গাসন এবং একদল গোমুখাসন করি।
১। অনিদ্রা দূর হয়।
২। অসমান কাঁধ সমান হয় ।
৩। মেরুদণ্ড সোজা হয় ।
৪। পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা দূর হয়।
৫। পায়ের বাত রোগের উপশম ঘটে।
৬। উত্তেজনা প্রশমিত হয় ।
নিচের ছকটি পূরণ করি :
১। যোগব্যায়ামের একটি বিশেষ পদ্ধতি | |
২। সর্বাঙ্গাসন করলে স্নায়ুমণ্ডলী | |
৩। যোগাসন করলে উত্তেজনা |
সর্বাঙ্গাসন ও গোমুখাসনসহ বেশ কয়েকটি আসনের বিশেষ-বিশেষ উপকারিতা সম্পর্কে আমরা জেনেছি। এও জেনেছি, আসন দেহ ও মনের সুস্থতা আনে। আমাদের প্রশান্ত করে তোলে। কিছু কিছু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট আসনে বসতে হয়। আবার আসন আমাদের দেহ ও মনকে একাগ্র চিত্তে ঈশ্বরের উপাসনার জন্য প্রস্তুত করে। এভাবে আসন হয়ে উঠেছে ধর্মের অঙ্গ।
সুতরাং স্বাস্থ্যরক্ষা ও ধর্মচর্চার জন্যই আমরা নিয়মিত আসনের অনুশীলন করব।
১। নিয়মিত আসন করলে শরীর ___ থাকে।
২। আসন অনুশীলন করলে সাধনার জন্য মন ___ হয়।
৩। পেশি সতেজ রাখা আসনের একটি ___।
৪। সর্বাঙ্গাসন করলে সকল প্রকার ___ বিনাশ ঘটে ।
১। আসন অনুশীলন করলে ২। সর্বাঙ্গাসন করলে ৩। স্নায়ু সতেজ রাখার একটি উপায় হলো ৪। হাঁপানি প্রতিরোধ করে ৫। আসন ধর্মের | আসন। সর্বাঙ্গাসন। ক্লান্তি দূর হয় । দেহ নমনীয় হয়। অঙ্গ ৷ গোমুখাসন । |
১। আসনের উপকারিতা কী?
২। চিন্তার ক্ষেত্রে আসনের গুরুত্ব কী ?
৩। গোমুখাসনের একটি উপকারিতা বর্ণনা কর ।
৪। উপাসনার ক্ষেত্রে আসনের ভূমিকা কী?
১। নিয়মিত অনুশীলনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
২। সর্বাঙ্গাসন অনুশীলনের পদ্ধতি বর্ণনা কর।
৩। গোমুখাসন অনুশীলনের পদ্ধতি বর্ণনা কর ।
৪। উপাসনার ক্ষেত্রে আসনের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর ।
আরও দেখুন...